নকল বউ পর্ব-০২ | | মোঃমোহাম্মদ সাদ

প্রায় ৫ মিনিট হলো কাজি অফিসের
সামনে দাঁড়িয়ে। সানজু মোবাইল ফোন
কানে নিয়ে কাকে যেন বারবার কল
দিচ্ছে।
-কি হইল আবার? এখানে দাঁড়ালি ক্যান?
শুভ কাজে দেরি করতে নাই চল এখন।
এই বলে সানজুর দিকে তাকালাম। রাগ আর
চিন্তা মিশ্রিত ভয়ংকর চোখে চেয়ে
আছে আমার দিকে! বুঝলাম আর কিছু এখন
ওকে বলা নিরাপদ না আমার জন্য।
এভাবে প্রায় ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে শুধু ওর
তামাশা দেখতেছি। একবার কল দেয়
কাকে যেন। আবার মনে মনে কি যেন বলে
দাঁতে দাঁত চেপে।
মনে হয় যাকে কল দিচ্ছে সে কল ধরছে না।
কি দরকার অন্য কাউকে কল দেয়ার। এতে
আরো ভেজাল হতে পারে। তার চেয়ে দুজন
বিয়ে করে চলে গেলেই ভেজাল শেষ।
-ঐ তুই বাড়িতে যা।
সানজুর এমন কথায় অবাক হয়ে তাকালাম
ওর দিকে!
-কি বলছিস এসব? তুই না আমাকে নিয়ে
পালিয়ে এসেছিস বিয়ে করতে।
এখন আবার যেতে বলছিস কেন?
দেখ তোকে আমার এমনেই খুব পছন্দ
ছোটকাল থেকে। দুজন একসাথে থেকেছি,
খেলেছি, খেয়েছি, শুয়েছি... এজন্য
তোকে আমি জানি। তুই রাগী হলেও তোর
ভিতরে অনেক ভালোবাসা আছে।
তোকে আমি কতদিন বলতে চেয়েছি যে
আমি তোকে ভালোবাসি। কিন্তু তুই আমার
২ বছরের ছোট আর যেইরকম রাগী তুই এজন্য
ভয়ে তোকে আই লাভ ইউ বলিনি।
কিন্তু বিশ্বাস কর আমি তোকে খুব
ভালোবাসি। তোকে বিয়ে করতে আমার
সমস্যা নাই।
এটুুকু বলে লজ্জাভাব নিয়ে সানজুর দিকে
তাকালাম।
এ কি! ওর চোখে যে পানি! ও কাঁদছে
কেনো??
-সানজু কি হয়েছে?
-আমাকে নিয়ে কোথাও যেতে পারবি
জীবন? না পারলে তুই বাড়িতে চলে যা
প্লিজ।
-আরে কাঁদছিস কেনো? তোর জন্য সব
পারবো আমি। কোথায় নিয়ে যেতে হবে
তোকে বল?
তারচেয়ে চল বাড়িতে চলে যাই। বাড়িতে
গিয়ে তোর আমার পরিবারকে বুঝিয়ে
বললেই আমাদের বিয়ে দেবে।
-চুপ একদম। বাড়িতে নয়, আমাকে অন্য
কোথাও নিয়ে চল।
-ওকে আয় আমার সাথে। এই বলে সানজুর
হাত ধরে বাসস্ট্যান্ডে এলাম। কোনকিছু
না ভেবে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
বাসে বসে আছি দুজন চুপ করে। আড়চোখে
সানজুর দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা মুখ
বুঝে কাঁদছে। চাপা কান্না ওর মুখে ভেসে
উঠেছে।
আমি ওর কাধে হাত দিয়ে কাছে টেনে
নিয়ে চোখের পানিটুকু মুছে দিলাম।
সানজু আমার দিকে তাকিয়ে আবার
ফুপিয়ে শব্দ করে কেঁদে দিল এবার!
-আরে চুপ কর। কাঁদবি না। লোকে কি
ভাববে বলতো?
এবার আমার কথায় যেন নিজেকে একটু
সামলে নিল সানজু।
মাথাটা আমার কাধে হেলিয়ে চুপ করে
রইলো।
গাড়ি যমুনা সেতুর উপর দিয়ে যাচ্ছে।
জানালা খুলে রেখেছি। হালকা বাতাসে
সানজুর সামনের চুলগুলো সরে গেছে।
কান্নামাখা মুখটা কি অপরুপ লাগছে। এই
পেত্নীটাকে হাসলে, রাগলে বা কাঁদলেও
সুন্দর লাগে দেখতে।
-এই জীবন, কোথায় যাচ্ছি আমরা এখন?
সানজুর কথায় ওর দিকে তাকালাম। ও কথা
বলতেছে। এই সুযোগে ওকে হাসিয়ে একটু
অন্যমনস্ক করা যায় কিনা দেখি।
-বউকে নিয়ে হানিমুনে যাচ্ছি ঢাকায়।
-কে তোর বউ? মাইর খাবি?
-অনেক খাওয়াইছোস ছোট থেকে আজ
পর্যন্ত। এখন অন্য কিছু খেতে চাই।
এই বলেই চোখ টেরা করে ওর রিয়্যাক্ট
দেখার জন্য তাকালাম ওর দিকে।
ওর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটেছে। কাধ
থেকে মাথাটা তুলে...
-কি খাবি বল তাহলে?
-কমুনা এখন। কইলে মারবি আমায়।
-আচ্ছা তুই কি জানিস জীবন, কি জন্য
এসেছিলাম খুলনা? আর কি হয়ে গেল
আমার?
-কি আবার! আমাকে বিয়ে করতে
চেয়েছিলি। কিন্তু সাক্ষি হিসেবে কেউ
না আসায় কাঁদছিলি।
-বোকামি না নেকামি করছিস আমার
সামনে?
আমি সানজুর গালদুটো দুহাতে ধরে ওর
চোখে চোখ রেখে বললাম, সেই
ছোট্টবেলা থেকে তোর সাথে থেকে বড়
হয়েছি।
তুই আর আমি যা করেছি দুজন একসাথেই
করেছি।
তোর সুখ দুঃখে আমি আর আমার সুখ, দুঃখে
তুই সবসময় বন্ধু হয়ে পাশে থেকেছি।
আর আমি জানবো না তোর কি হয়েছে!!
কেন আমায় নিয়ে আজ বের হয়েছিস?
সবই জানি রে পাগলি।
তুই জীবনে এই একটা ব্যাপার ই আমার
কাছে গোপন রেখেছিলি। কিন্তু আমি
ঠিকই জানি সবকিছু।
তুই যেমন তোর ভালোবাসার ব্যাপারটা
গোপন রেখেছিস আমার কাছে। ঠিক
আমিও একটা ব্যাপার গোপন রেখেছি
তোর কাছে।
আমি তোরটা বুঝতে পেরেছি এবং জেনে
নিয়েছি সবই। কিন্তু তুই আমারটা বুঝতেও
পারিসনি তাই জানতেও পারিসনি।
.
সানজু চোখদুটো একটু মুছে বলল, তোর কি
কাহিনী বল তাহলে?
-বলতে হবেনারে। একসময় নিজ থেকেই
জানতে পারবি।
-আমার ভালোবাসার সম্পর্কে জানলি কি
করে এটা তো বল তাহলে।
-সানজু তোর সবকিছুই তো জীবনের
ছোটবেলা থেকেই জানা। খেলা, পড়া,
খাওয়া, শোয়াসহ সব কাজেই তোর সাথী
হিসেবে সাথে থাকতাম।
এরপর যখন তুই যুবতি হলি তখন আমায়
এড়িয়ে চলতে লাগলি। আমি বড় হলেও এই
বয়সটা সম্পর্কে বুঝতাম।
আমিও নিজেকে তোর থেকে দুরে রাখতে
চাইতাম। কিন্তু পারতাম না রে। লুকিয়ে
লুকিয়ে ছায়ার মতো তোর পাশে থাকতাম।
কখনো কখনো তুই এটা বুঝতে পেরে আমায়
ধরে মারতি! তোর থাপ্পর, কিল, ঘুসি
খেয়েও তোর খোঁজ নিতাম আড়াল থেকে।
তুই যে আমার প্রিয় বন্ধু ছিলি। আমি
বুঝতাম বয়সটা আমাদের পৃথক করে
দিয়েছে। কিন্তু মন তা বুঝতো না।
ভাবতাম তুইও হয়তো আমার মতোই ভাবিস
আমাকে।
কিন্তু সেটা ভাবতি না কখনোই। কারন তুই
একজনের প্রেমে পরেছিলি।
এটা জেনেও আমি না জানার ভান করে
থেকেছি তোর পাশে।
এরপর যখন জানলাম তোর ঐ ভালোবাসার
মানুষটা তোর সাথে টাইমপাস করছে তখন
তোকে বলতে চেয়েছিলাম এটা।
কিন্তু সাহস পাইনি। কারন তুই ওর প্রেমে
একেবারেই অন্ধ ছিলি। আমি বললে
আমাকেই ভুল বুঝে দুরে ঠেলে দিতি। তাই
আমি চাইনি তোকে হারাতে। ছায়ার মতো
পাশে থেকেছি যেন তুই কোন বড় ভুল না
করিস। তুই কোন ভুল কাজ করতে গেলে
আমি যে কোন উপায়ে তোকে ফেরাতাম
ভুল পথ থেকে। এ কারনে তোর কতো থাপ্পর
খেয়েছি হিসেব ও করতে হিমশিম খাই!
গতকাল যখন রাতে স্টেশনে আসতে বললি
তখনি বুঝলাম কি করতে যাবি তুই। এটাও
জানতাম যে তোর ঐ ভালোবাসার মানুষটা
তোকে বিয়ে করতে আজ কাজি অফিসে
আসবে না।
কারন.....
-থামলি ক্যান? কি কারন বল কুত্তা। তুই
এতো কিছু জেনেও কেন আমায় বলিস নি
বল তুই বল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ