
এত সকালে কোন বেক্কল কল দিল বিরক্ত করার জন্য?! চোখ ডলতে ডলতে নাম্বার না দেখেই ফোনটা রিসিভ করলাম। -হ্যালো, কে?? -শালার কুত্তা, বিলাই, ইদুর, টিকটিকি.... তুই এখনো কেন আসোস নাই স্টেশনে?? সকাল সকাল এরকম একটা বকা শুনে লাফ দিয়ে উঠলাম। ভাল করে নাম্বারটা দেখেই বুঝলাম আজ আর রক্ষা নাই! -প্লিজ সানজু সোনা জানু পেত্নী রাগ করিস না, আমি আসতেছি ১৫ মিনিটের ভিতর। এই বলেই কলটা কেটে দিয়ে বাথরুমের দিকে দৌড় দিলাম। হাতমুখ কোনরকম ধুয়েই প্যান্ট আর টি-শার্ট পরে বের হলাম। মা পিছন থেকে ডাকছে, কই যাস জীবন?? ভাত খেয়ে যা। -এখন সময় নাই মা, এসে খামুনি। ভাগ্যটা ভাল। রাস্তায় দাঁড়াতেই একটা সিএনজি এসে হাজির। সিএনজিতে বসে ভাবতেছি গত কালকের কথা। . গতকাল রাত ৯ টায় সানজু হঠাৎ ফোন দিয়েই বলল আমার রুমে আয় তাড়াতাড়ি! বলেই কেটে দিল কল। কি আর করবো? না গেলেই ঐ পেত্নীটা গালে তিন চারটা থাপ্পর মারবে এসে! সানজু আমার কাকাতো বোন। অবশ্য নিজের কাকাতো বোন নয়। ওর দাদা আর আমার দাদা দুই ভাই। এই সম্পর্কের কাকাতো বোন। রুম থেকে বের হয়ে দেখলাম কেউ আছে কিনা বাইরে। নাহ, সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। ধীর পায়ে সানজুর রুমের দরজার কাছে গিয়ে দেখি দরজা খুলেই রেখেছে। রুমে ঢুকতেই আমার কলারটা চেপে ধরে বলল, কাল ভোর ৮ টার ভিতর খুলনা রেল স্টেশনে চলে আসবি। আমি তোর আগেই গিয়ে থাকবো ওখানে। -কেন কি হইছে? আর ভোরে আমায় ডাক দিস, একসাথেই যাব না হয়। -চুপ, আমি যা বললাম তাই করবি। মনে থাকে যেন। যা এখন শুয়ে পর গা। মনে রাখিস ৮ টার ভিতর স্টেশনে যাবি। এই বলেই আমায় ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজা আটকে দিল! . ঘড়ির দিকে তাকালাম। সর্বনাশ, ৮ টা ৩০ বেজে গেছে! না জানি কয়টা কিল, থাপ্পর কপালে আছে আমার। সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে প্লাটফর্মে উঠতেই আবার রিং বেজে উঠলো ফোনের। ভয়ে ভয়ে রিসিভ করলাম... -হ্যা...হ্যা...হ্যালো, এইতো আমি এসে পরছি প্লাটফর্মে। -ঐ কুত্তা তুই টিকেট কাউন্টারের সামনে আয় তাড়াতাড়ি। টিকেট কাউন্টারের সামনে গিয়ে দেখি ওর বাব্বাহ.... রাক্ষস রানী কটকটির মতো তাকিয়ে আছে সানজু। আমায় দেখেই বলল, আয় আমার সাথে। ওর পিছন পিছন হাটতেছি আর ভাবতেছি যাক ওর হাতের মাইর থেকে বাঁচলাম এ যাত্রায়। ও রেললাইন এর পাশ দিয়ে হাটছে। -এই সানজু কই যাবি এইদিক?? -এইতো এই রাস্তার ধারের গাছটার আড়ালে আয়। এখানে মানুষজন আমাদের দেখবে না। -কি...কি...ই...কি বলিস এসব? আড়ালে কেন?? একথা বলার সাথে সাথেই আমার কলারটা ধরে টান দিয়ে গাছের আড়ালে নিয়েই ঠাস ঠাস করে কয়েকটা দিয়া দিল! -স্টেশনেই মারতাম তরে। কিন্তু তোর ভাগ্য ভাল তাই এখানে নিয়ে এসে মারলাম। -কি হইসে? এমন করছিস ক্যান?? -ঐ কুত্তা তোরে কয়টার ভিতর আসতে কইছিলাম?? -সরি, জানোস ই তো আমার ৮ টার আগে ঘুম ভাঙ্গেনা কেউ ডাক না দিলে। -চুপ শয়তান। তোর কারনে ট্রেন মিস করেছি। এখন আয় আমার সাথে। এই বলেই হাটতে লাগলো আবার স্টেশনের দিকে। এই পেত্নীটা কোথায় নিয়ে যাবে আল্লাই ভাল জানে। এখন ওরে কিছু জিগাইলে আবার থাপ্পর দিবো। তারচেয়ে চুপ করে হাটি। দেখি কোথায় যায়? একটু পরেই আরেকটা ট্রেন এসে হাজির। ও ইশারায় ট্রেনে উঠতে বলল। দুজন পাশপাশি সিটে বসে পরলাম। ও চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। আমি হাতটা একটু তুলে ওর রাগ কমানোর জন্য ওর মাথাটা ধরে আমার কাধে হেলিয়ে দিলাম। -কি হইছে রে? কোথায় যাবি?? -এই টিকেট টা দেখ। কোথায় যাচ্ছি বুঝবি। টিকেটটা হাতে নিয়ে দেখি ঢাকার এর টিকেট! -ঐ শীববাড়ি যেতে আবার এই গাড়িতে এসে উঠতে হবে?? আগে বললে তো বাস বা সিএনজিতেই যেতাম। -চুপ কর। আমার ইচ্ছে ছিল যদি পালিয়ে বিয়ে করতে যাই তো ট্রেনে করেই যাব। তাই ট্রেনে যাচ্ছি। ওর কথা শুনে যেন আমি আকাশ থেকে মাটিতে পরলাম! -পালিয়ে বিয়ে করবি মানে? আমাকে বিয়ে করবি তুই? -বকবক করিস না। খুলনা কাজি অফিসে চল বুঝতে পারবি। সানজুর কথা শুনে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এই মেয়েটা পাগল হয়ে গেল নাকি? কোনকিছু না বলে কাজি অফিস!! -ঐ পেত্নী তুই কি আমাকে বিয়ে করবি? -তোর কি মনে হয় শুনি একটু...বল? -দেখ পাগলামির ও সীমা আছে। এভাবে হুট করে এমন সিদ্ধান্ত না নিলেও পারতি। আমাদের দুই পরিবারকে জানালেই তো তারা রাজি হতো মনে হয়। -বললাম তো বকবক করিস না। ট্রেন থেমে গেছে এবার নেমে পর। দুজন নেমে খুলনা নিউ মার্কেটের কাছে চলে গেলাম। একটু হাটতেই একটা কাজি অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সানজু। তবে কি সত্যিই ও আমাকে বিয়ে করবে??
0 মন্তব্যসমূহ